Monday-Saturday 11 am to 5 pm
  • Order Now:

For Online Order Enquiry: +91 9143723275

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি – স্বাদ ও গুণের এক অপূর্ব মেলবন্ধন

তাল মিছরি
দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি – স্বাদ ও গুণের এক অপূর্ব মেলবন্ধন

by | Nov 24, 2023

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরির নাম শুনলেই প্রথম মাথায় আসে পুরোনো কলকাতা ও সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, আর বাংলার সেই সেকালেরই এক অনবদ্য অবদান এই তাল মিছরি। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে যখন সমগ্র ভারতবর্ষ এক দুর্দমনীয় শক্তি শৃঙ্খলে আবদ্ধ, দেশের মানুষ মুক্তির আশায় উন্মুখ, স্বদেশী আন্দোলনের ডঙ্কা বেজে উঠেছে , ঠিক সেই সময় বাংলার ইতিহাসের পাতায় উদ্ভাসিত হলো দুলালের তাল মিছরির নাম। বাংলার সেকাল থেকে একাল – তাল মিছরির গুরুত্ব এক ও অপরিসীম। দুলালের তাল মিছরির এই রমরমা আজ বাংলা ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যে পৌছেছে, এবং বর্তমানে এই তাল মিছরি দেশের সীমানা অতিক্রম করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে।

বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, সকল বাঙালির কখনো না কখনো পরিচয় হয়েছে দুলাল ভড়ের তালমিছরির সাথে, সে পথ্য হিসাবে হোক, মুখশুদ্ধি হিসেবে, বা লজেন্সের বিকল্প হিসেবে। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, পেট গরম, হজমের সমস্যা, বা রক্তাল্পতা, দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরির গুরুত্ব সর্বত্র।  একদিকে তাল মিছরির মন ভালো করে দেওয়া মিষ্টি স্বাদ, আর অন্যদিকে এর মহৌষধি গুণ, দুইয়ে মিলে দুলালের তাল মিছরির গুণাগুণ অনস্বীকার্য্য।  

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি ব্যবসার সূত্রপাত 

বাবা জওহরলাল ভড়ের ছিল কাপড়ের ব্যবসা। বড়বাজারের গদিতে রমরমিয়ে চলতো সেই ব্যবসা। 

কিশোর দুলাল যোগ দেন বাবার ব্যবসায়ে। খুব শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারলেন তৎকালীন বাংলায় স্থায়ী আধিপত্য বজায় রাখতে গেলে প্রয়োজন নতুনত্বের।  তিনি চাইলেন বস্ত্র ব্যবসার বাইরে গিয়ে নতুন কোনো পথে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করতে। সেই ভাবনার হাত ধরে, প্রথমে তিনি শুরু করলেন সাদা মিছরির ব্যবসা, এবং তারপর ধীরে ধীরে সেখান থেকে তাঁর ব্যবসার মোড় ঘোরালেন তাল মিছরির ব্যবসায়।  সেই সময়, বাইরের রাজ্য থেকে বাংলায় তাল মিছরির আমদানি হতো, এই প্রথম কোনো বাঙালি ব্যবসায়ী তাল মিছরি ব্যবসায় পদার্পণ করলেন।  শুরু হলো যাত্রা। 

উনিশ শতকের প্রথম দিকে, বাইরের রাজ্য, বিশেষত মাদ্রাজ, থেকে প্রচুর পরিমানে তাল মিছরি আমদানি হতো কলকাতায়, কারণ বঙ্গে প্রতি বাড়িতে তখন মিছরির চাহিদা অসীম। রোগভোগে হোক, বা নিয়মিত রান্নায়, তাল মিছরি বাঙালির এক চিরকালীন স্বস্তির স্থান। তালমিছরির গুণাবলীর কারণে এই ঔষধি গুণসম্পন্ন দ্রব্য, ভারতীয় তথা সমগ্র বাঙালির মনে, এক শান্তির জায়গা। বাংলায় মিছরির চাহিদার প্রাবল্যের কারণে, খুব অল্প দিনেই বাজারে মিছরির ব্যবসায় নিজের নামডাক করে ফেলেন দুলাল চন্দ্র ভড়। ১৯৪৪ সালে রেজিস্ট্রেশন হয় দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি কোম্পানির।      

তাল মিছরির  প্রস্তুতি

তাল মিছরি তৈরির ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো উৎকৃষ্ট মানের তালের পর্যাপ্ত যোগান। প্রথম দিকে এই তালের যোগান আসতো হুগলী জেলার শ্রীরামপুরে রাজবলহাটে অবস্থিত দুলাল চন্দ্র ভড়ের পৈতৃক বাগানবাড়ি থেকে। বর্তমানে মেদিনীপুর জেলার তমলুক থেকে আমদানি হয় তালের।  চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয় তাল রস।  সেই তালের শাঁসকে চিনি দিয়ে জ্বাল দিয়ে প্রস্তুত করা হয় তাল মিছরি।  তাল মিছরির প্রস্তুতি পদ্ধতি যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ । তাল মিছরি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৭-৮ দিন। জ্বাল দেওয়া তাল মণ্ডকে জমিয়ে তৈরী করা হয় এই সুস্বাদু তালমিছরি। 

কোনো কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়না এই সমগ্র পদ্ধতিতে।  যার ফলে তালমিছরির গুণাগুণ সম্পর্কে যেকোনো সন্দেহ ভিত্তিহীন।  শিশু থেকে বৃদ্ধ – যে কোনো বয়সী মানুষ তালমিছরির দ্রব্যগুণ উপভোগ করতে পারেন। তালের রস ও সামান্য চিনির মিশ্রণ, এই ঘরোয়া দ্রব্য প্রস্তুতির মূল উপকরণ। বলাবাহুল্য,  এই বিশুদ্ধতা ও ঔষধি গুণই দুলালের তাল মিছরির মূল্যের ধারক ও বাহক ।  

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরির স্বাদ – সাধারণের মধ্যে অসাধারণ 

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তালমিছরির স্বাদ সাধারণ ও অসাধারণের এক অভাবনীয় মিশ্রণ। স্বাদে ও গন্ধে এই তাল মিছরি বাঙালির হৃদয়ের খুব কাছের, খুব প্রিয়। আজকের দিনে তাল মিছরির কথা উঠলেই, যে কোনো বাঙালি বাড়িতে শুরু হয় অতীতের স্মৃতিচারণ। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে তাল মিছরি কিভাবে তার প্রভাব বিস্তার করে বাংলার বাজারে ও দ্রব্যগুণে সাধারণ মানুষের এতো কাছের হয়ে ওঠে, তার চাক্ষুস প্রমান দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি।        

আরও অনেক তালমিছরির কোম্পানি হয়তো কখনো কোনো বাঙালির ঘরে তাদের প্রস্তুত তাল মিছরি পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু তারা কেউই দুলাল-এর তাল মিছরির জায়গা করে নিতে পারেনি।  দিনের শেষে দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি বাঙালির নিশ্চিন্ত আশ্রয়। মিছরির পানা হোক, অথবা শরবত বা চায়ে চিনির পরিবর্তে মিছরির ব্যবহার, সবেতেই তাল মিছরির প্রবেশ অবাধ। রান্নায় চিনির পরিবর্তে এর ব্যবহারও কোথাও তাল মিছরিকে আলাদা স্থান দেয়।  তাই সাধারণের মধ্যে থেকেও তাল মিছরি অসাধারণ। 

বিশুদ্ধ প্রস্তুতি পর্ব ও যত্নশীল প্যাকেজিং-এর শেষে যে তাল মিছরি বাঙালির ঘরে আসে, তার মূল্য নেহাত দু-এক কথায় বিচার করার নয়। দ্রব্যগুণ ও ঔষধিমূল্য দুলালের তালমিছরিকে পরিচিতি ও সাফল্যের এক আলাদা স্তরে নিয়ে গেছে।   

দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরির গুণাগুণ  

এই অনুচ্ছেদে আমরা জেনে নেবো, দুলালের তাল মিছরির প্রকৃত উপকারিতা, তা সে দ্রব্যগুণ হোক বা রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা।  কমবয়সী হোক বা বেশি, তাল মিছরির উপকারিতার ব্যাপ্তি বয়সের বাধ মানে না।  ভিটামিন, মিনারেল, ও লৌহগুনে সমৃদ্ধ তাল মিছরির উপকারিতা সুদূরপ্রসারী।  

সর্দিকাশি ও গলা ব্যথা উপশম 

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সর্দিকাশি ও গলা ব্যথা কমবেশি সকলেরই হয়ে থাকে।  এইসময়, চা-এ বা হালকা গরম জলে তাল মিছরি মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা ও ঠান্ডার উপশম হয়।  

রক্তাল্পতা দূরীকরণ 

সঠিক আহার গ্রহণ না করার ফলে, আজকের প্রজন্মের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের মধ্যে রক্তাল্পতার সমস্যা ক্রমশ বর্ধমান। এই ক্ষেত্রে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় তাল মিছরি ম্যাজিকের মতো কাজ করে রক্তাল্পতা দূরীকরণে।  

দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণ   

আজকের যুগে, দিনের অনেকটা সময় আমাদের চোখ থাকে ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস-র ওপর।  এহেন পরিস্থিতিতে দৃষ্টিশক্তি ভীষণভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল এ সমৃদ্ধ তাল মিছরি  দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে সাহায্য করে।   

শ্বাসপ্রশ্বাস-এর সমস্যা নিরাময় 

বর্তমান দিনে পরিবেশ দূষণের হার ক্রমবর্ধমান ও দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিদিন দুধের মধ্যে তাল মিছরি দিয়ে খেলে, এই সমস্যার দূরীকরণ সম্ভব।  

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি 

খাবারে কেমিক্যালস ও প্রিজারভেটিভস বেশি থাকার কারণে, বর্তমান সময়ে হজমের সমস্যা সকলের।  খাবার সাথে বা খাবার পরে, তাল মিছরির ভক্ষণ এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।  

প্রসাব সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণ 

শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রসাব সংক্রান্ত সংক্রমণ ও ব্যথার সমস্যা সর্বজনীন, এবং তার প্রধান কারণ, কাজের ব্যস্ততায় সঠিক সময় ওয়াশরুম ব্যবহার করতে না পারা। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও মূত্রনালী সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। দুধ বা হালকা গরম জলের সাথে তাল মিছরি দিয়ে খেলে এই সমস্যা দূর হয়।   

উপসংহার 

অতীত হোক বা বর্তমান , আলমারিতে রাখা দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরির শিশি যেকোনো বাঙালি বাড়িতে এক ঐতিহ্যের স্মারক বহন করে। এই তাল মিছরির গুণাগুণ  নিয়ে আর প্রশ্নের অবকাশ নেই। দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি নিজের দ্রব্যমূল্যে ও গুণাগুণে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে, এবং এই তাল মিছরির পরিচিতি শুধু বাঙালিদের মধ্যে সীমিত নয়, দেশ ও জাতের বাঁধন ছাড়িয়ে তা পা বাড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে।

0 Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts